মনিরামপুর প্রতিনিধি: স্মৃতির সরণি বেয়ে কেউ কেউ চলে যেতে পারে দূর থেকে বহুদূরে। সেই যাওয়া যদি হয় মানব কল্যাণে মানবের তরে। তবে এমন স্মৃতি বয়ে আসুক বারেবারে।
বলছিলাম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কৃতি সন্তান ডা. মেহেদী হাসান এর কথা। যার মানবিক সেবা ছাড়িয়ে গেছে দেশ থেকে দেশান্তরে। মানবিক এই ডাক্তার মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের ছায়াঢাকা সবুজ পল্লীগ্রামের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী পিতা- আলহাজ্ব জবেদ আলী সরদার ও মাতা- ফরিদা বেগমের ছোট ছেলে। মেহেদী অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ায় পিতামাতা ও ভাই বোনদের ইচ্ছাছিল ডাক্তার তৈরী করার। পরিবারের আশা ও নিজের আগ্রহে তিনি বিদেশে থেকে মেডিক্যাল ডিগ্রী নিয়ে ফিরে আসেন দেশ সেবায় সুনাম অর্জন করার জন্য। তবে কে জানতো এই মেহেদী হাসানের মানবসেবা একদিন পৌঁছে যাবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসীদের কল্যাণে।
করোনাভাইরাসের প্রথম দিকে মহামারি প্রাদূর্ভাবে মানুষ যখন দিশেহারা। ভয়ে আতঙ্কিত সারা বিশ্ববাসী ঘর বন্ধি, তখন যশোরের মানবিক ডাক্তার খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ম্যাডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ এই চিকিৎসক (মেডিকেল অফিস) টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে নিরন্তর ছুটে চলেছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায়।
করোনার শুরুতেই ততকালীন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ এক ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে ডা. মেহেদী হাসানকে দায়িত্ব দেন নয়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর এডমিন ক্যাডারদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। তার চিকিৎসা সেবায় নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর এডমিন ক্যাডাররা সুস্থ হলে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানের এডমিন ক্যাডাররা ডাক্তার মেহেদী হাসানের করোনার চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করে। এরপর তথ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তার চিকিৎসা সেবা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ গ্রহণ করেন।
ততকালীন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে তিনজন ডাক্তার চিকিৎসার জন্য সিলেক্ট হয় তার ভিতরে ডা. মেহেদী একজন, পরবর্তীতে ডাক্তার বাড়িয়ে ৩০ জন করা হয়। করোনার এই দূর প্রভাবে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে ডা. মেহেদী হাসানের নাম। মহামারীর এই করোনায় যেন একমাত্র ভরসা ডা.মেহেদী হাসান। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুক ঢালাওভাবে প্রচার প্রচারণা হতে থাকে ডা. মেহেদী হাসান এর চিকিৎসার খবর। এর পর ফোন আসতে থাকে দিনরাত ২৪ ঘন্টা দেশ বিদেশ থেকে।
নিজ এলাকার দরিদ্র থেকে শুরু করে যশোর জেলা পুলিশ এবং আপামর জনসাধারণ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার প্রতিনিধি এবং সারা দেশের প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ও তাদের আত্মীয় সজন বাদ যাননি কেউ ডা: মেহেদীর টেলিমেডিসিনের ফ্রী চিকিৎসা থেকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসী করোনা আক্রান্ত রোগিদের ফ্রী চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করেছেন এই ডাক্তার। আবার সহযোগিতা করেছেন কখনো কখনো অসহায় রুগীর ফ্রী ঔষধ কিনে দিয়ে। এ পর্যন্ত তিনি পনের হাজার প্লাস করোনা আক্রান্ত রোগীকে সরাসরি ও টেলিমেডিসিনের আওতায় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন। যার মধ্যে সাড়ে দশ হাজার রুগীকে দিয়েছেন ফ্রী চিকিৎসা। আবারও করোনা শুরু দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা।
ইতিমধ্যে তার এই অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ২০২১ সালের সেরা মানবিক ডাক্তার খেতাব এবং ২০২০ সালের (OIC) আয়োজনে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০, বিভিন্ন গণমাধ্যমের লেখা হয়েছে গরীবের ডাক্তার, ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউট(আইইইবি), যশোর পুলিশ, কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক এর থেকে সংবর্ধনা। ডা. মেহেদী হাসান বর্তমান ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে(বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। অবশেষে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া এই মানবিক ডাক্তারও করোনা পজিটিভ হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। গতকাল ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষা শেষে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডাক্তার মেহেদী হাসান। ইতিমধ্যে ডা. মেহেদী হাসান অসুস্থ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। অসুস্থর খবর শুনে হাজার হাজার ভক্ত, পেসেন্ট, শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে ডাক্তার মেহেদী হাসান এর দ্রুত সুস্থতায় সবাই দোয়া কামনা করছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।